বগুড়ায় ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে বিক্ষোভ, আওয়ামী লীগ অফিসে তালা

সংগঠনের পাঠাগার সম্পাদক সৈয়দ ইমাম বাকের সাংবাদিকদের বলেন, “সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে বগুড়ায় ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়া হয়েছে।”

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণার পর থেকেই বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া নেতাকর্মীরা; বিক্ষুব্ধরা একপর্যায়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। 

জেলা কমিটি বিলুপ্তির প্রায় নয় মাস পর সোমবার রাতে সজীব সাহাকে সভাপতি এবং আল-মাহিদুল ইসলাম জয়কে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঘোষিত ৩০ সদস্যের কমিটিতে ১৭ জন সহসভাপতি, পাঁচজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ছয়জনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। 

কমিটির তালিকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর পদবঞ্চিত ও কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া নেতাকর্মীরা রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের টেম্পল রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়ের প্রবেশ পথে তালা ঝুলিয়ে দেয়।

এরপর তারা দলীয় কার্যালয়ের সামনে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। শহরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। 

এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকালে বিক্ষুব্ধরা নবগঠিত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কুশপুতুল দাহ করেন। বিক্ষোভকারীরা দুপুর ১টার দিকে মিছিল নিয়ে শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথা হয়ে শেরপুর সড়কে যায়। পরে তারা দলীয় কার্যালয়ের সামনে ফিরে এসে সড়কের ওপর অবস্থান নেয়। অনেকে ফেইসবুকে সংগঠন ছাড়াও ঘোষণা দেন। 

সদ্যঘোষিত জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান বলেন, “অবৈধ প্রক্রিয়ায় গঠিত কমিটি বাতিল না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”  

জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে সভাপতি পদের প্রার্থী ছিলেন মুকুল ইসলাম। তিনি নতুন কমিটিতে সহসভাপতি পদ পেয়েছেন। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি ফেইসবুকে সংগঠন ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।  

মুকুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে শ্রম দেওয়ার পরেও যখন আমার পরিশ্রমকে মূল্যায়ন করা হলো না তখন মনে হয়েছে, এখানে না থাকাই ভাল।” 

এই অবস্থার মধ্যেই নবগঠিত কমিটির পক্ষে নেতাকর্মীরা শহরের সাতমাথা মোড়ে এবং সরকারি আজিজুল হক কলেজে তাদের সমর্থকদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন। 

নতুন কমিটির সভাপতি সজীব সাহা বলেন, “সবার সহযোগিতা নিয়ে আমরা সংগঠনকে এগিয়ে নিতে চাই। কমিটি দিয়েছে কেন্দ্র। তারা যাচাই-বাছাই করেই দিয়েছেন।”  

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সংগঠনের পাঠাগার সম্পাদক সৈয়দ ইমাম বাকের সাংবাদিকদের বলেন, “সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে বগুড়ায় ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়া হয়েছে। যাদেরকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে তারা আওয়ামী পরিবারের সন্তান। বগুড়ার মতো জায়গায় প্রকৃত আওয়ামী পরিবারের সন্তানদের পাওয়া খুব কঠিন। তাছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগও নেই।” 

গত ২১ জানুয়ারি বগুড়ায় মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরপর ২ ফেব্রুয়ারি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করা হয়। দুই পদের জন্য অন্তত ৫০ জন জীবনবৃত্তান্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জমা দেন। 

নতুন কমিটির বিক্ষোভের ব্যাপারে জানতে চাইলে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু বলেন, “আমাদের নেত্রী সবকিছু যাচাই-বাছাই করে কমিটি দিয়েছেন। এখানে আমাদের কারও কিছু করার নেই।” 

“যারা প্রত্যাশা অনুযায়ী পদ-পদবি পাননি তাদের মন খারাপ হতেই পারে। সেই মন খারাপ থেকে তারা কিছু কথা বলতে পারেন। সেটা আমরা বড় করে দেখতে চাই না।” 

কার্যালয়ে তালা দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার ওপেল মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ছিলাম না। তবে ঘটনাটি শুনেছি। যদি সত্যি সত্যিই কার্যালয়ে তালা দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে সেটি ঠিক হয়নি। এটা সুখকর নয়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *